ডিআরইউ/০১৩৮/২০২২(১) ২৯ জানুয়ারি, ২০২২
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হাবীবুর রহমানের অকাল মৃত্যুর ঘটনাটি অবিলম্বে ‘সুষ্ঠু তদন্তের’ মাধ্যমে প্রকৃত কারণ তুলে ধরার দাবী জানিয়েছেন তার সাংবাদিক সহকর্মী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ আয়োজিত এক শোকসভায় তারা বলেন, হাবীবের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সে আসলেই সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটা হত্যাকান্ড। সে কিভাবে মারা গেছে তা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে খুজে বের করতে হবে। ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায় নি। মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তদন্তকারি সংস্থা কোনা সাংবাদিক সংগঠন বা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি। যেখানে হাবীবুর রহমানকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেখানের সিসিটিভি ক্যামেরা কেন নষ্ট ছিলো? বেলচা হাতে যাদের দেখা গেছে তারা কারা? এটা নিয়ে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃস্টি হয়েছে। ঐদিন রাতে কি ঘটেছিলো, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকেই খুঁজে বের করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে হবে।
গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাত দুইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিলে ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়’ নিহত হন হাবীবুর রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনার পর পারিপার্শিক অবস্থা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি গত ২৩ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে ‘তদন্তের’ মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ প্রকাশ করার দাবী জানান।
ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় ডিআরইউ নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শোকসভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও এ দাবী জানান। উল্লেখ্য, হাবীবুর রহমান দীর্ঘদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বিট কাভার করতেন।
শোকসভায় মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, হাবীবুর রহমান প্রতিভাবান সাংবাদিক ছিলেন। তার মতো সদালাপি ছেলে অকালে মারা যাবে তা মেনে নেয়া যায় না। তাকে নিয়ে শোকসভা করতে হবে কখনো ভাবিনি। ১২-১৩ বছর ধরে তার সাথে যোগাযোগ। প্রায় প্রতিদিন সংবাদ বা কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ার জন্য ফোন করতো।
সাংবাদিক ও হাবীবের পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা হতাশ হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সাংবাদিক বান্ধব। তিনি সময় পেলেই সাংবাদিকদের সাথে বসেন। প্রধানমন্ত্রী থাকতে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। যতদ্রুত সম্ভব আমরা হাবীবের স্ত্রী ও ভাইয়ের চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। একই সঙ্গে হাবীবের পরিবার যাতে দ্রুত আর্থিক সহায়তা পায় সেই ব্যাপারেও তিনি সবাইকে আশ্বস্থ করেন।
সাংবাদিক হাবীবুর রহমানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে তদন্তের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাবীবুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে তদন্তটা দ্রুত হওয়া উচিত। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবো। তারা যেন ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করে বিষয়টি বের করেন।
এর আগে সভাপতির বক্তব্যে ডিআরইউর সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র পক্ষ থেকে স্বাধ্যমতো তার পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি আশা করবো ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিএফউজে এবং প্রেস ক্লাব হাবীবুর রহমানের পরিবারের জন্য একটি তহবিল তৈরি করার ব্যবস্থা নিবেন। একই সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে হাবীবের স্ত্রী ও তার ছোট ভাইয়ের একটি চাকরির দাবি জানান তিনি।
হাবীবুর রহমানের মৃত্যুর তদন্ত দাবি করে ডিআরইউ সভাপতি আরও বলেন, ১০ দিন হয়ে গেলো, যারা তদন্ত করছেন এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের বা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি। হাবীবের মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে তদন্তের মাধ্যেমে আমরা তা জানতে চাই। ঘটনার আইনি সমাধান চাই।
শোকসভায় হাবীবুর রহমানের বাবা মো: পেয়ারা বলেন, আমার বলার ভাষা নেই। আপনাদের সাথে চলার পথে আমার ছেলে কোন বেয়াদবি করে থাকলে মাফ করবেন। বাবা হয়ে ছেলে লাশ কাধে নেওয়া যে কি বেদনা এটা বলে বুঝানো যাবে না। আমি মনে করি না সে এ্যাক্সিডেন্ট করেছে, তাকে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে। আমার ছেলের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পরেন।
হাবীবুর রহমানের স্ত্রী হাসি আক্তার রিমি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, হাবীবের মৃত্যু নিয়ে যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে এটা নিয়ে আমার একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। হাবীব যে নেই এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারিনা, হাবীবকে কেউ ভুলে যাবেন না।
এছাড়াও শোকসভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ (বাদল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ ও যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বিট পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক উত্তম চক্রবর্তী ও অমরেশ রায় এবং সময়ের আলো পরিবারের পক্ষ থেকে সিটি এডিটর সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম।
ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহজাহান সরদার, শাহেদ চৌধুরী ও মুরসালিন নোমানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও সৈয়দ শুকুর আলী শুভও বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
শোকসভায় ডিআরইউ বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান, কার্যনির্বাহী সদস্য হাসান জাবেদ ও মো: আল-আমিন বক্তব্য রাখেন। ডিআরইউ’র স্থায়ী সদস্য মানিক লাল ঘোষও বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও ডিআরইউ বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদুল হাসান ও সোলাইমান সালমান উপস্থিত ছিলেন।
শোকসভার শুরুতে হাবীবুর রহমানের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পাশাপাশি ডিআরইউ নসরুল হামিদ মিলনায়তনে একটি ‘শোক বই’ রাখা হয়।
শোকসভা শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন, হাবীবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং তাদেরকে আশ্বস্থ করেন।
বার্তা প্রেরক-
রফিক রাফি
দপ্তর সম্পাদক
মোবাঃ ০১৯১২৭৭৪২২৬